মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া :: কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় এক শিক্ষক একই সঙ্গে দুইটি সরকারী বিদ্যালয়ে চাকুরী করছেন! মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন নামের ওই শিক্ষক উজনাটিয়া ইউনিয়নের করিয়ারদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পেকুয়া মডেল সরকারী জিএমসি ইনষ্টিটিউশনে নামের দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্টানে সরকারী নিয়মানীতি লংঘন করে তথ্য গোপন করে চাকুরী করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি এ ঘটনা প্রকাশের পর পুরো পেকুয়া উপজেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব গোঁয়াখালী গ্রামের মৃত জালাল আহমদের পুত্র মাষ্টার শাহাব উদ্দিন উজানটিয়া ইউনিয়নের করিয়ারদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিগত ২০১৭ ইংরেজীর আগস্ট মাসে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন। সে সময় থেকে তিনি ওই স্কুলে নিয়মিত পাঠদান করে আসছেন এবং সরকারী কোষাঘার থেকে নিয়মিত বেতন ভাতাদি উত্তোলন পূর্বক ভোগ করছেন। এরই মাঝে তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদে চাকুরীর পরীক্ষা দিয়ে আসছিলেন। ২০১৬ সালের ০৯ অক্টোবর জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসি) কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে পেকুয়া মডেল সরকারী জিএমসি ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক মাষ্টার জাহির উদ্দিন স্বাক্ষরিত পে/জি,এম,সি/শি,নি/০১২০১৬স্মারক নিয়োগপত্রের অনুবলে বিগত ০১/১১/২০১৬ ইংরেজী তারিখে সহকারী শিক্ষক (বিজ্ঞান) পদে যোগদান করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে সরকারি চাকুরীতে যোগদানের পূর্বে তিনি পেকুয়া জিএমসিতে যোগদান করেছিলেন।
কিন্তু ২০১৭ সালে মাষ্টার শাহাব উদ্দিন করিয়ারদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারী চাকুরীতে যোগদান করলেও পূর্বের কর্মস্থল পেকুয়া মডেল সরকারী জিএমসি ইনস্টিটিউশন থেকে ইস্তফা দেননি। সরকারী চাকুরীতে তথ্য গোপন করে জিএমসিতে যোগদান করেছিলেন। বর্তমানেও পেকুয়া জিএমসিতে সহকারী শিক্ষক (বিজ্ঞান) পদে বহাল রয়েছেন।
এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মাষ্টার শাহাব উদ্দিন পেকুয়া মডেল সরকারী জিএমসি ইনষ্টিটিউশনের শিক্ষক হাজিরা খাতায় উপস্থিতির স্বাক্ষর করেছেন। শিক্ষক হাজিরা খাতায় ওই চারমাস তিনি সকাল ৮ টায় বিদ্যালয়ে আগমন এবং বিকাল ৪টায় বিদ্যালয় থেকে প্রস্থান করেছেন বলে উল্লেখ রয়েছে। একই সাথে তিনি আবার ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চারমাস উজানটিয়া ইউনিয়নের করিয়ারদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাজিরা খাতায়ও স্বাক্ষর করেছেন।
সাম্প্রতিক পেকুয়া জিএমসি ইনষ্টিটিউশন জাতীয়করণের তালিকায় সরকার অন্তর্ভূক্ত করেছে। জিএমসির শিক্ষকদের জাতীয় করেণের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানোও তালিকাতেও মাষ্টার শাহাব উদ্দিনের নাম রয়েছে। এছাড়াও জিএমসি ইনষ্টিটিউশন জাতীয় করণের পূর্বে মাষ্টার শাহাব উদ্দিনকে এমপিওভূক্ত করার জন্য বিগত ২৭/১১/২০১৭ইংরেজী তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক বরাবরে জিএমসির প্রধান শিক্ষক মাষ্টার জহির উদ্দিন অনিয়ম ও দূর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ১১৮/১৭ নং স্মারকে পত্রও প্রেরণ করেছিলেন।
এ বিষয়ে পেকুয়া জিএমসির প্রধান শিক্ষক মাষ্টার জহির উদ্দিনের বক্তব্য নেওয়ার জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে করিয়ারদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাষ্টার আবদুল হামিদ বলেন, ‘বিগত ২০১৭ সালে শাহাব উদ্দিন আমার বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদানের পর থেকে অধ্যবধি পর্যন্ত কর্মরত রয়েছেন। তিনি এখানে যোগদানের পূর্বে অন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্টানে যোগদান করলে সেটা তার জানা নাই।
অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক মাষ্টার শাহাব উদ্দিনের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে আজ ২৫ সেপ্টেম্বর বিকালে ও সন্ধ্যার পর বেশ কয়েকবার এ প্রতিবেদকের মুঠোফোন থেকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য সংযোজন করা সম্ভব হয়নি।
পেকুয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার সালামত উল্লাহ খান জানান, এক সাথে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা অন্যায় ও বিধি বহির্ভুত। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে তথ্য গোপন করে একই সঙ্গে দুইটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বহাল থাকার ঘটনায় অভিযুক্ত মাষ্টার শাহব উদ্দিনসহ এ ধরনের অনিয়ম ও জালিয়াতির সাথে জড়িত বিরুদ্ধে দূর্নীতি প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে স্থানীয় সচেতন এক ব্যক্তি।
পাঠকের মতামত: